শিশুর পেটে গ্যাস: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও ঘরোয়া সমাধান

শিশুর পেটে গ্যাস হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অনেক সময় শিশুর জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে। গ্যাসের কারণে শিশুর অস্বস্তি, কান্নাকাটি এবং খাওয়ার সমস্যা হতে পারে। তবে এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানা থাকলে এই সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব।


বাচ্চার পেটে গ্যাস


---


শিশুর পেটে গ্যাসের কারণ


১. খাওয়ার সময় বাতাস ঢোকা:

শিশুকে সঠিকভাবে খাওয়ানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে তার পেটে বাতাস জমে যায়। এটি মূলত বোতল ফিডিং বা স্তন্যপানের ভুল পদ্ধতির কারণে হতে পারে।


২. মায়ের খাদ্যাভ্যাস:

মায়ের খাদ্যের গ্যাস তৈরি করা উপাদান যেমন বাঁধাকপি, ডাল, বা অতিরিক্ত মসলা শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।


৩. অপরিপক্ব হজমতন্ত্র:

নবজাতকদের হজম প্রক্রিয়া পুরোপুরি বিকশিত না হওয়ায় তাদের পেটে সহজেই গ্যাস জমে।


৪. ফর্মুলা দুধ:

কিছু ফর্মুলা দুধ শিশুর হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে, যা গ্যাস বাড়ায়।


৫. অতিরিক্ত খাওয়ানো বা দ্রুত খাওয়ানো:

শিশুকে অতিরিক্ত বা দ্রুত খাওয়ানোর ফলে তার পেটে গ্যাস জমার সম্ভাবনা থাকে।



---


শিশুর পেটে গ্যাসের লক্ষণ

বাচ্চার পেটে গ্যাস


১. অস্বাভাবিক কান্না:

শিশু যদি কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ কান্না করে, তবে এটি গ্যাসের লক্ষণ হতে পারে।


২. পেট ফুলে যাওয়া:

গ্যাসের কারণে শিশুর পেট ফুলে উঠতে পারে এবং পেট স্পর্শ করলে শক্ত মনে হয়।


৩. ঘুমের সমস্যা:

গ্যাসের কারণে শিশুর স্বাভাবিক ঘুম ব্যাহত হতে পারে।


৪. পা সোজা বা ভাঁজ করা:

গ্যাসের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে শিশু বারবার পা টানটান করে বা পেটের দিকে টেনে আনতে পারে।


৫. বেশি ঢেঁকুর তোলা বা বাতাস নির্গত করা:

পেটে জমে থাকা বাতাস নির্গমনের মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যা প্রকাশ পায়।


---


শিশুর পেটে গ্যাস দূর করার ঘরোয়া সমাধান

বাচ্চার পেটে গ্যাস


১. ঢেঁকুর তোলা:

শিশুকে খাওয়ানোর পর সোজা করে ধরে তার পিঠে আলতো চাপ দিন। এটি তার পেটে জমে থাকা বাতাস বের করতে সাহায্য করবে।


২. সাইকেল চালানোর ব্যায়াম:

শিশুকে চিত করে শুইয়ে তার পা ধরে সাইকেল চালানোর মতো নড়াচড়া করান।


৩. পেটের মালিশ:

হালকা তেল ব্যবহার করে শিশুর পেটে ঘড়ির কাঁটার দিকে মালিশ করুন। এটি গ্যাসের সমস্যা কমাতে কার্যকর।


4. গরম পানির সেঁক:

একটি নরম কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে শিশুর পেটে সেঁক দিন।



5. তুলসী ও সুঁইফলা চা:

মায়ের জন্য তুলসী বা সুঁইফলার চা গ্যাসের সমস্যা কমাতে কার্যকর।



---


গ্যাস প্রতিরোধের উপায়


১. সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়ানো:

শিশুকে খাওয়ানোর সময় সঠিক অবস্থানে রাখুন এবং ধীরে ধীরে খাওয়ান।


২. অল্প করে বারবার খাওয়ানো:

একবারে বেশি খাওয়ানোর পরিবর্তে অল্প অল্প করে খাওয়ান।


৩. সঠিক বোতল বা স্তন্যপানের পদ্ধতি:

খাওয়ানোর সময় এমন বোতল বা স্তন্যপানের টেকনিক ব্যবহার করুন, যা বাতাস প্রবেশ কমায়।


৪. মায়ের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:

মায়ের খাদ্য থেকে গ্যাস তৈরি করা উপাদান বাদ দিন।


5. পর্যাপ্ত ঢেঁকুর তোলা:

খাওয়ার পর শিশুর ঢেঁকুর তোলা নিশ্চিত করুন।


---


কখন ডাক্তার দেখাবেন?


১. গ্যাসের কারণে শিশুর খাওয়ার অভ্যাস একেবারে কমে গেলে।
২. পেট ফুলে উঠলে বা ব্যথা তীব্র হলে।
৩. শিশুর কান্না দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে।
৪. শিশুর শরীর দুর্বল হলে।



---


উপসংহার


শিশুর পেটে গ্যাস একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি সময়মতো চিহ্নিত এবং প্রতিকার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপরের ঘরোয়া সমাধানগুলো প্রয়োগ করে দেখুন এবং যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সচেতন থাকুন এবং তার যত্নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিন।



---

শিশুকে সুস্থ রাখতে এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন।প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেন।

আরো পড়ুনঃ 
নবজাতকে কি খাওয়াতে হবে 
শিশুদের ঠান্ডা লাগলে কি করনীয় 
কোন খাবার খেলে গ্যাস হয়
ব্রণ দূর করার সহজ উপায় 
চুল পড়া রোধে ১০টি ঘরোয়া উপায় 
কোন রুগীর জন্য কি ডাক্তার দেখাতে হয়

শিশু মোবাইলে আসক্তি হলে করনীয় 

আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আশা করি এটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। আপনার মতামত বা পরামর্শ জানাতে মন্তব্য করুন, কারণ আপনার মতামতই আমাকে আরও ভালো কিছু লেখার অনুপ্রেরণা দেয় ✍️। যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে, তবে এটি অন্যদের সাথেও শেয়ার করতে ভুলবেন না 📲। আগামী লেখায় নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব, ততদিন আমাদের সাথেই থাকুন 🌟।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url