শরীরে ফোঁড়া কেন হয়? কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়
ফোঁড়া কী?
ফোঁড়া (Boil) হলো ত্বকের নিচে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট ফোলাভাব, যা ব্যথাযুক্ত ও পুঁজযুক্ত হয়ে থাকে। এটি সাধারণত Staphylococcus aureus নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়।
ফোঁড়া ছোট হলে সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়, তবে বড় বা বারবার হলে চিকিৎসা করা জরুরি।
শরীরে ফোঁড়া হওয়ার কারণ
ফোঁড়ার মূল কারণ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলেও আরও কিছু কারণ রয়েছে, যেমন—
১. লোম ফোঁড়া কেন হয়?
লোমকূপের সংক্রমণ হলে লোম ফোঁড়া হয়, যা Folliculitis নামে পরিচিত। এটি তখনই হয় যখন—
- লোমকূপ ময়লা বা ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে।
- শেভ করার সময় ত্বকে কেটে গেলে।
- ঘাম জমে লোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে।
২. বার বার ফোঁড়া কেন হয়?
যদি শরীরে ঘন ঘন ফোঁড়া হয়, তবে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা বা কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষণ হতে পারে।
বারবার ফোঁড়া হওয়ার কারণ—
- ডায়াবেটিস: শরীরে উচ্চ রক্তশর্করার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- অপরিষ্কার জীবনযাপন: ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে।
- প্রদাহজনিত রোগ: যেমন, হাইড্রাডেনাইটিস সুপুরাটিভা (Hidradenitis Suppurativa)।
- অপুষ্টি: শরীরে ভিটামিন ও প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে ত্বক দুর্বল হয়ে যায়।
৩. পাছায় ফোড়া কেন হয়?
পাছায় ফোঁড়া হওয়ার কয়েকটি কারণ:
- অতিরিক্ত ঘাম: ঘাম জমে ত্বকে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
- টাইট পোশাক পরা: ঘর্ষণের কারণে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় এবং সংক্রমণ হয়।
- অপরিষ্কার থাকা: মলদ্বারের আশেপাশে জীবাণু সহজেই ছড়ায়।
৪. বাচ্চাদের ফোড়া কেন হয়?
বাচ্চাদের ত্বক সংবেদনশীল হওয়ায় তাদের ফোঁড়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণগুলো হলো—
- অপরিষ্কার ত্বক।
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা।
- ঘাম ও ধুলাবালির সংস্পর্শে বেশি থাকা।
৫. মাথায় ফোড়া কেন হয়?
মাথায় ফোঁড়া সাধারণত Scalp Folliculitis বা Sebaceous Cyst এর কারণে হয়। এর কারণ—
- খুশকি বা অতিরিক্ত তেলতেলে মাথার ত্বক।
- অপরিষ্কার মাথার ত্বক।
- ছত্রাক সংক্রমণ।
- অতিরিক্ত চুলকানো বা চুলে নখ লাগানো।
৬. ঘন ঘন ফোঁড়া কেন হয়?
যদি শরীরে বারবার ফোঁড়া হয়, তাহলে এটি Furunculosis হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ। এটি হতে পারে—
- দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা থাকলে।
- শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন জমে গেলে।
- প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে।
৭. বগলে ফোড়া কেন হয়?
বগলে ফোঁড়ার কারণ—
- ঘামের কারণে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি।
- শেভ করার ফলে লোমকূপের সংক্রমণ।
- বগলে টাইট কাপড় পরার ফলে ত্বকের ঘর্ষণ।
৮. কানে ফোড়া কেন হয়?
- কানে ময়লা জমলে।
- ইনফেকশন হলে।
- নখ দিয়ে কান খোঁচানোর কারণে।
৯. নাকে ফোড়া কেন হয়?
নাকের লোমকূপের সংক্রমণ হলে ফোঁড়া হতে পারে। কারণগুলো হলো—
- নাকের ভিতরে ময়লা জমা।
- নাক বেশি ঘষা বা চুলকানো।
- অ্যালার্জি বা ভাইরাল সংক্রমণ।
১০. হাতে পানি ফোড়া কেন হয়?
ভাইরাস বা এলার্জির কারণে হাতে পানি ফোঁড়া হতে পারে, যা Dyshidrotic Eczema নামে পরিচিত।
১১. পায়ে ফোড়া কেন হয়?
- অপরিষ্কার মোজা বা জুতা পরার কারণে।
- আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় থাকলে।
১২. বিষ ফোঁড়া কেন হয়?
যখন ফোঁড়ার সংক্রমণ খুব বেশি হয় এবং গভীরে চলে যায়, তখন এটিকে বিষ ফোঁড়া বলা হয়। এটি খুবই ব্যথাযুক্ত ও বিপজ্জনক হতে পারে।
১৩. মুখে ফোঁড়া কেন হয়?
- তৈলাক্ত ত্বকের কারণে।
- ব্রণের সংক্রমণ হলে।
- অ্যালার্জি থাকলে।
ফোঁড়ার চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়
ফোঁড়া প্রতিরোধের উপায়:
- ত্বক পরিষ্কার রাখা।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- সঠিক পোশাক পরা।
ফোঁড়ার ঘরোয়া চিকিৎসা:
- গরম পানির সেঁক: সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- হলুদ ও মধুর পেস্ট: প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে।
- অ্যালোভেরা: প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- ফোঁড়া বড় হলে।
- ব্যথা অনেক বেশি হলে।
- জ্বর হলে।
- বার বার ফোঁড়া হলে।
শেষ কথা
ফোঁড়া সাধারণত গুরুতর কিছু নয়, তবে ঘন ঘন হলে বা সংক্রমণ বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে এটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।