শিশুর ওজন কম হলে করণীয়: সঠিক যত্ন এবং পুষ্টির উপায়

 শিশুর ওজন কম হলে করণীয়: বিস্তারিত ও তথ্যবহুল আলোচনা

শিশুর ওজন কমার কারন


শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং ওজন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হলে বা বড় হওয়ার সময় ওজন বৃদ্ধি যথাযথ না হলে এটি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সঠিক পদ্ধতি এবং তথ্যভিত্তিক জ্ঞান থাকা জরুরি।


---


নবজাতকের ওজন কম হওয়ার কারণ

শিশুর জন্মের সময় বা পরবর্তীতে ওজন কম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:

1. গর্ভকালীন পুষ্টির অভাব:

গর্ভাবস্থায় মায়ের সুষম খাদ্যের অভাব শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।

ফোলেট, প্রোটিন বা আয়রনের ঘাটতি এর একটি বড় কারণ।


2. প্রি-ম্যাচিউর জন্ম:

গর্ভাবস্থার পূর্ণ মেয়াদ (৩৭ সপ্তাহ) না হলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয় না।


3. সংক্রমণ:

জন্মকালীন সংক্রমণ শিশুর শরীরের পুষ্টি শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।


4. জেনেটিক সমস্যা:

কিছু বংশগত কারণ শিশুর ওজন কমানোর জন্য দায়ী হতে পারে।


5. দুধের অভাব:

নবজাতক পর্যাপ্ত মায়ের দুধ না পেলে পুষ্টিহীনতার শিকার হয়।


---


শিশুর ওজন কম হওয়ার লক্ষণ

শিশুর স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট আকার।
চামড়া ঢিলে এবং শুকনো দেখায়।
শিশুর কান্নার শব্দ দুর্বল।
খাওয়ার প্রতি অনীহা।
স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের অভাব।

---


শিশুর ওজন কম হলে করণীয়

১. মায়ের দুধ নিশ্চিত করুন:

মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য সেরা এবং অপরিহার্য। এটি শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।


২. প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিন:

৬ মাসের পর শিশুর খাদ্য তালিকায় ডাল, চালের গুঁড়া, ফলের পিউরি, এবং শাকসবজি যুক্ত করুন।

পর্যাপ্ত প্রোটিন, ফ্যাট এবং ভিটামিন যুক্ত খাবার দিন।


৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন:

শিশুকে রোগ জীবাণু থেকে দূরে রাখতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখুন।

ঠান্ডা বা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে শিশুকে গরম কাপড় পরান।


৪. সাপ্তাহিক পর্যবেক্ষণ:

শিশুর ওজন নিয়মিত মাপুন এবং যদি ওজন বৃদ্ধিতে সমস্যা হয় তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।


---


শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায় 

১. প্রচুর জলীয় খাবার দিন:

মায়ের দুধ, সুপ এবং পাতলা খাবার শিশুর হজমে সাহায্য করে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।

২. ফলমূল ও শাকসবজি:

পাকা কলা, পেঁপে, আলু, এবং মিষ্টি কুমড়া শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

শাকসবজি থেকে ভিটামিন এ, সি এবং আয়রন শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।


৩. নিয়মিত সূর্যের আলো:

শিশুর জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। এটি হাড় শক্তিশালী করে এবং শরীরের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।


---


গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজন কম হওয়ার প্রতিকার

১. মায়ের খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি রাখুন।

২. নিয়মিত প্রসূতি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখুন।পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। 

৪. ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন পালং শাক এবং ডিম, খাদ্যতালিকায় রাখুন।


---


শিশুর ওজন কম থাকলে সমস্যাগুলো

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়।

২. স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং মাইলফলক পূরণে বিলম্ব হয়।

৩. দীর্ঘমেয়াদে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।

৪. অপুষ্টিজনিত রোগ যেমন, রিকেটস, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।


---


উপসংহার

শিশুর ওজন কম হলে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। মায়ের দুধ, পুষ্টিকর খাবার এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।


আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে আজ থেকেই সঠিক পদক্ষেপ নিন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।

---


আপনার যদি এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানান। আপনার মতামত ও পরামর্শ আমাদের ব্লগকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

---
আরো পড়ুনঃ 
১।শিশুদের  কি কি খাবার খেতে দেওয়া যায় আর কি দেওয়া        যায় না।
২।শিশুদের পেটে গ্যাস হলে কি করনীয় 
৩।ঠান্ডা লাগলে কি করনীয়
৪।শিশু মোবাইলে আসক্তি হলে করনীয় 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url